অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায়

আপনি কি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায় খুঁজছেন? তবে এই আর্টিকেলটি নিশ্চিতভাবেই আপনাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে সক্ষম। কিভাবে? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটিবার পড়েই দেখুন!

Table of Contents

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? (What is Affiliate Marketing)

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অনলাইনে নিজের ওয়েবসাইট, ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে বা মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগ করে টাকা আয় করার পদ্ধতি।

অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় কোন পণ্য বা সার্ভিসের প্রচার করা, নতুন ক্রেতা তৈরি ও তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করার জন্য সনাতন ধারার মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ না করে অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কমিশন প্রদানের ভিত্তিতে মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার প্রক্রিয়াকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

এ ধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার তথ্য যুক্ত বিজ্ঞাপন অন্য যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ঐ বিজ্ঞাপনে পণ্য বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের লিংকের সাথে বিজ্ঞাপন প্রচারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত একটি স্বতন্ত্র আইডি যুক্ত করে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে একজন ভিজিটর যখন অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার পর বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে উক্ত পণ্যটি ক্রয় করেন তখন সেই বিক্রয়মূল্যের একটি নির্দিষ্ট ধার্যকৃত অংশ বা কমিশন বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে নিয়োজিত প্রচারক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে? (How Affiliate Marketing works)

মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর এই প্রক্রিয়ায় তিনটি পক্ষ কাজ করে।

১। প্রথম পক্ষ – পণ্য বা সার্ভিস বিক্রেতা তথা মার্চেন্ট; যিনি একইসাথে পণ্যের উৎপাদনকারী ও হতে পারেন। আবার পাইকারী বিক্রেতা, এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটরও হতে পারেন। মোট কথা, উনি হচ্ছেন- পণ্যের যোগানদাতা।

২। দ্বীতিয় পক্ষ – প্রমোটার। অর্থাৎ যিনি বিক্রেতার পণ্য বা সার্ভিস তার নিজের ওয়েবসাইটে বা অন্যান্য মাধ্যমে বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রমোট করবেন। প্রমোটারকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার বলা হয়ে থাকে।

৩। তৃতীয় পক্ষ – কাস্টমার বা ক্রেতা। ইনি সেই ব্যক্তি যে কিনা দ্বীতিয় পক্ষ বা প্রমোটারের ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রদর্শণ করা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে পণ্যটি কেনার পরই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কমিশন পাবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি
Photo by Dominika Roseclay on Pexels.com

কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?

সহজভাবে যদি বলি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করার প্রয়োজন হবে।

  1. আপনার ওয়েবসাইটের নিশের সাথে মানানসই অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করে তাতে সাইন আপ বা জয়েন করে নিন।
  2. প্রমোট করার জন্য প্রোডাক্ট খুঁজে বের করুন।
  3. প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন কোড আপনার ওয়েবসাইটের সঠিক জায়গায় বসিয়ে দিন। অর্থাৎ পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করুন।
  4. ওয়েবসাইটের ভিজিটর বা সোস্যাল মিডিয়া সাইটের ফলোয়াররা প্রোডাক্ট কিনতে শুরু করলে তার হিসাব রাখুন।
  5. মোট বিক্রির বদৌলতে প্রাপ্য কমিশন প্রোমোটারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বুঝে নিন।

বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার করছি।

আপনারা নিশ্চয়ই অ্যামাজন.কম এর নাম শুনেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অ্যামাজন তাদের অনলাইন ই-কমার্স স্টোর এর মাধ্যমে বহুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করে আসছে।

সামান্য সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স পণ্য তথা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায় অ্যামাজন নামের অনলাইন পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারক প্রতিষ্ঠানটিতে।

আপনি জানেন কি, ইচ্ছে করলে আপনি, আমি এবং আমাদের মতো আরও অনেকে নিজেদের মার্কেটিং অর্থাৎ পণ্য বিক্রয় করার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অ্যামাজন.কম এর পণ্য বিক্রি করে তা থেকে কমিশন গ্রহণ করার মাধ্যমে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারি।

অ্যামাজন কতৃপক্ষ নিজেরাই অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আমাদেরকে সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

ফলশ্রুতিতে যে কেউ অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন নিজের ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারবেন এবং পণ্য বিক্রির টাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন গ্রহণ করতে পারবেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, এই ব্যবস্থায় ক্রেতাদের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না।

কারণ, একজন ব্যক্তি অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে কোন পণ্য কিনলে তার যে মূল্যে কিনতে হবে, সে যদি সরাসরি সেই জিনিসটি ক্রয় করতো তাতেও তার সমান অর্থাৎ একই পরিমাণ টাকা খরচ হতো।

কেন পেশা হিসেবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নির্বাচন করবেন?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা একটি লাভজনক ও স্মার্ট পেশা। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

আমাদের বাংলদেশেও এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের টাকা উপার্জনের মূল উৎসই হচ্ছে- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে নিজের একটি ব্লগ তৈরি করে তাতে অ্যাফিলিয়েট পণ্যের প্রচার করে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে আয় করা।

এছাড়া, অন্যান্য পেশার তুলনায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করাটা সহজও বটে। কেননা-

নিজের পছন্দমত পণ্য নির্বাচন করে মার্কেটিং করা যায়।

যে কোন স্থান বা অবস্থান যেমন, নিজের ঘরের শান্ত, স্বস্তিদায়ক পরিবেশে বসে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়।

সময়ের স্বাধীনতা থাকে। অর্থাৎ আপনি যখন খুশি কাজ করতে পারবেন। আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কারো রক্তচক্ষুর শাসানি সহ্য করতে হবে না।

বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার খরচ কেমন হয়?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার জন্য খুব বেশি টাকা লগ্নি করার প্রয়োজন হয় না। এমনকি অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বা ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করতে পারবেন।

তবে, একটি বিষয় মনে রাখবেন- অ্যাফলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হতে কিছুটা বিনিয়োগ করা ভালো।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

প্রথমত আপনার ব্লগে যতটা সম্ভব মানসম্মত লেখা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ যুক্ত করে ব্লগকে দর্শক প্রিয় করার চেষ্টা করবেন।

যথেষ্ট পরিমাণে দর্শক বা ভিজিটর আসা শুরু করলে তারপর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার কথা বিবেচনা করবেন।

কারণ, দর্শক হচ্ছে একটি ব্লগের প্রাণ বা চালিকাশক্তি। একারণেই দর্শকহীন ব্লগ থেকে আপনার নূন্যতম আয় করাও সম্ভব হবে না।

অপরদিকে দর্শক যত বেশি হবে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার সম্ভাবনাও তত বৃদ্ধি পাবে।

কিভাবে অ্যাফিলিয়েট পণ্য বা প্রোডাক্ট প্রমোট করবেন?

আপনি যদি মার্কেটিং এর ছাত্র হয়ে থাকেন তবে মার্কেটিং পলিসি নির্ধারন করার গুরুত্ব নিশ্চয়ই জানা থাকবে। প্রতিটি ব্যবসার প্রচার ও প্রসার করার জন্য যেমন কিছুটা মার্কেটিং করা প্রয়োজন। ঠিক তেমনি অ্যাফেলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা করে সফল হবার জন্যও আপনার অ্যাফেলিয়েট প্রোডাক্টটির প্রচার করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

সেটা কি করে সম্ভব?

আপনাকে কিছুটা কৌশলি হতে হবে। ধরে নিলাম, আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওয়েব হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ExonHost এর শেয়ার্ড ও ভিপিএস ওয়েব হোস্টিং প্রোডাক্ট প্রমোট করতে ইচ্ছুক। এর জন্য শুধু তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করলেই খুব একটা সফল হওয়া সম্ভব হবে না।

স্বল্প সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হতে চাইলে করণীয় কি?

আপনার অ্যাফলিয়েট প্রোডাক্টটির একটি বিশ্বাসযোগ্য তথ্যসমৃদ্ধ রিভিউ আর্টিকেল (Review Article) বা পর্যালোচনা মূলক নিবন্ধ নিজের ব্লগে প্রকাশ করতে পারেন।

বিভিন্ন জনপ্রিয় তথা মার্কেট লিডার কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টসমূহের রিভিউ আর্টিকেল নিজের ব্লগে প্রকাশ করতে পারেন। এতে করে যেমন আপনি খুব সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন। ঠিক একইভাবে আপনার মতামতের উপর নির্ভর করে দর্শকরা অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট কিনে উপকৃত হলে তাদের সাথে আপনার একটি বিশ্বস্ততার বন্ধনও তৈরি হতে থাকবে।

পরবর্তীতে সঠিক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এবং পণ্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট এই দর্শকরাই আপনার অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রোমোট করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়।

এরপর রিভিউ আর্টিকেলগুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, প্রভৃতিতে শেয়ার করুন।

অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশী সংখ্যক ভিজিটর বা দর্শককে সেই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনার ব্লগে নিয়ে আসুন।

বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন ফোরামে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার উপায়

এর জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম যেমন- কোরা (Quora), ইয়াহু অ্যানসার্স (Yahoo Answers) এর মধ্যে আপনার ব্লগ ও অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট এর বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রশ্নসমূহ খুঁজে বের করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার উত্তরগুলো সহজ ভাষায় একটু বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করে দেয়ার চেষ্ঠা করবেন যাতে করে আপনার উত্তরটি যথেষ্ঠ পরিমান দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়।

এরপর, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তরের মধ্যে আপনার ব্লগের অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টের রিভিউ আর্টিকেলের লিংকটি যুক্ত করে দেবেন।

এছাড়া আরও ভালো ও দ্রত ফলাফলের জন্য সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা (SEM) তথা গুগল এডস অথবা ফেসবুক বা টুইটার এডস এর মাধ্যমে অর্থাৎ পিপিসি (PPC) পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর সাহায্য নিন।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) এর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার করে কিভাবে শুধুমাত্র একটি ব্লগ পোস্টে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগে আয় করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।

এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাবার জন্য আপনার প্রতিটি আর্টিকেল; যেখানে অ্যাফিলেয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করেছেন, এর সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও করে নিন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য কিভাবে বিষয় বা নিস (Niche) নির্বাচন করবেন?

আপনার ব্লগটি যে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, ঠিক সে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন করবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য নির্বাচনযোগ্য কয়েকটি বিষয় বা নিস (Niche)

অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রথমত সে বিষয়ে ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা হলে পরবর্তীতে একই বিষয় সংশ্লিষ্ট অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে সঠিকভাবে অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট মার্কেটিং করে অনলাইনে টাকা আয় করা যায়।

নিচে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনে ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরিতে নির্বাচন করা যায় এমন কিছু জনপ্রিয় বিষয়ের উল্লেখ করা হলো।

  • স্বাস্থ্য সেবা
  • অর্থ ও বাণিজ্য
  • ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
  • ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট
  • অনলাইনে আয়
  • নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী
  • বিউটি টিপস
  • রান্নাবান্না
  • লাইফ স্টাইল
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইত্যাদি।

কেমন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন করবেন?

একটি ব্যাপার অবশ্যই মনে রাখবেন। অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচনের জন্য মানের ব্যাপারে কোন আপোষ করবেন না।

শুধুমাত্র হাই কমিশন রেট দেখে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন করলে অনেক সময় পণ্যের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে ত্রুটি থেকে যায়।

ফলশ্রুতিতে আপনার প্রতি দর্শক বা অনুসরণকারীদের মনে একধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয় – যা কিনা আপনার জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ভিজিটর আশংকাজনক হারে কমে যেতে পারে।

অন্যদিকে ভালো প্রোগ্রাম প্রমোট করলে কমিশন রেট অনেক সময় সমস্যা করে না।

যেমন- অ্যামাজন এর কথাই ধরুন।

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Amazon Affiliate Marketing) এর সুবিধা

কোন ব্যক্তি হয়তো আপনার এমন একটি প্রোডাক্ট লিংক ক্লিক করে অ্যামাজনের সাইটে প্রবেশ করলো যার মোট মূল্য মাত্র ৫ ডলার।

সুতরাং নিশ্চিত ভাবেই সে প্রোডাক্ট ক্রয় করায় আপনার কমিশন কিছুই থাকবেনা।

অথচ সেই ব্যক্তি হয়তো অ্যামাজন এর বিশাল পণ্যের ভান্ডার থেকে খুঁজতে খুঁজতে এমন একটি জিনিস কিনলো যার সর্বমোট মূল্য ৩০০০ ডলার।

অতএব বুঝতেই পারছেন, শুধুমাত্র ৫ ডলারের একটি পণ্যের বিক্রি করে আপনি দিনশেষে পেয়ে যেতে পারেন ১৫০ ডলার কমিশন বা তার চাইতেও অনেক বেশি কিছু।

সুতরাং বুঝে-শুনে ভালোভাবে বাজার যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিন।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মধ্যে অ্যামাজন ছাড়াও অন্যান্য যে সকল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে ভালো অংকের টাকা আয় করা যায় তাদের একটি লিস্ট নিচে দেয়া হলো-

কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের মার্কেটপ্লেস বা অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক

  • ক্লিকব্যাংক (www.clickbank.com)
  • সিজে (কমিশন জাংশন) (www.cj.com)
  • ইম্পেক্ট রেডিয়াস (www.impact.com)
  • রেক্যুতেন লিংকশেয়ার (www.rakutenmarketing.com)
  • শেয়ারএসেল (www.shareasale.com), ইত্যাদি।

মূলত এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করে না। এদেরকে বরং মধ্যস্বত্বভোগী বলা যায়।

কারণ এরা মার্চেন্ট অর্থাৎ যারা নিজেদের পণ্য বিক্রি করার জন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম সুবিধা প্রদান করে এবং পাবলিশার অর্থাৎ আমরা যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত – উভয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।

বিনিময়ে এরাও কিছু কমিশন গ্রহণ করে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

তবে আমাদের প্রয়োজন মতো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা ও তা মার্কেটিং করার মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার ক্ষেত্রে এদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায়

প্রয়োজনে অনেকটা সময় নিয়ে অনলাইনে খুঁজে খুঁজে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য, রিভিউ পরে, বুঝে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহের নোট নিয়ে নেবেন।

এরপর সবগুলো তথ্য একত্রিত করে নিজেই সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কিত সর্বাধিক সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ একটি আর্টিকেল আপনার ব্লগে প্রকাশ করবেন।

মার্কেটিংয়ের পরিভাষায় একে প্রোডাক্ট সম্পর্কিত রিভিউ আর্টিকেল বলা হয়।

এই লেখাতে আপনি ঐ পণ্যটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তথ্য যেমন লিখবেন ঠিক তেমনি উক্ত পণ্যটি আপনার ব্লগের ভিজিটররা কেন কিনবেন বা এটি তাদের কি কি কাজে আসতে পারে সে সম্পর্কিত তথ্যাদি সহজ ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

আপনি অবশ্যই প্রোডাক্ট বিবরণীর শেষ অংশে Shop Now বা এখনই কিনুন শব্দযুগল টেক্সট লিংক এর মাধ্যমে বা দেখতে আকর্ষণীয় ওয়েব বাটনে লিখে তাতে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে আপনার দর্শককে ঐ পণ্যটি আপনার দেয়া লিংক এর মাধ্যমে কেনার জন্য উৎসাহিত করবেন।

লেখাতে অতিরঞ্জিত প্রণোদনা বা কেনার জন্য পণ্যের মিথ্যা প্রচারণা পরিহার করে যা কিছু সত্য, শুধুমাত্র তাই প্রকাশ করবেন।

সম্ভব হলে আর্টিকেলের অ্যাফিলিয়েট লিংক এর নিচের অংশে Affiliate Disclosure সংশ্লিষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে আপনার দর্শককে এই মর্মে আশ্বস্ত করবেন যে, কোনো ভিজিটর যদি আপনার লিংকের সূত্র ধরে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন পণ্য কেনে তবে তাকে অতিরিক্ত একটি টাকাও পরিশোধ করতে হবে না।

এইভাবে, আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে মার্কেটিং এর বিভিন্ন সৃজনশীল কলাকৌশল প্রয়োগ করে অনলাইনে খুবই অল্প বিনিয়োগ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী পরিমানে অর্থ, সুনাম ও মর্যাদা।

— শেষ কথা —

অতএব, আর দেরি কেন? আজই একটি ব্লগ তৈরি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা শুরু করুন।

নেমচিপ.কম থেকে ডোমেইন নেম ও ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস কিনে আজই শুরু করুন আপনার স্বপ্নীল সাফল্যের লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা।

কোন সাহায্য – সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবো। আজ এ পর্যন্তই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

Share this

Leave a Comment