ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায়

ওয়ার্ডপ্রেস কি? WordPress কেন শিখব এবং ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায় বিস্তারিত জানতে লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পড়ে নিন। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় খুব সহজভাবে সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

সহজ কথায়, ওয়ার্ডপ্রেস (ইংরেজিতে WordPress) হলো সবচেয়ে সহজ, শক্তিশালী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট তৈরির ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, ইন্টারনেটের প্রথম সারির ১ মিলিয়ন ওয়েবসাইটের মাঝে প্রায় ৪১ শতাংশ ওয়েবসাইটই তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে।

অর্থাৎ আপনার ভিজিট করা চারটির মাঝে অন্তত একটি ওয়েবসাইট হয়তো ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে তৈরীকৃত। ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব ডিজাইনের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্মের নাম।

Table of Contents

ওয়ার্ডপ্রেস কি? (What is WordPress)

ওয়ার্ডপ্রেস একটি Open Source Content Management System (CMS)। Open Source অর্থ সবার জন্য উন্মুক্ত, Content হলো একটি ওয়েবসাইটে থাকা বিভিন্ন উপাদান (এটা হতে পারে কোনো লেখা কোনো ছবি কিংবা অন্য যেকোনো কিছু)। Management অর্থ ব্যবস্থাপনা।

অতএব, Open Source Content Management System (CMS) বলতে বোঝায়, এমন একটি সিস্টেম, যার মধ্যে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কনটেন্ট ম্যানেজ বা নিয়ন্ত্রণ করার নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে এবং যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত।

Open Source Content Management System হওয়ায় ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে শুধু ডেভেলপাররা নয়, যে কেউ ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরী করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ওয়ার্ডপ্রেস কেন অসাধারণ? ওয়ার্ডপ্রেস কেন এত অধিক জনপ্রিয়

ওয়ার্ডপ্রেস অসাধারণ, কারণ এর ফিচার বা বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি। যে কোন মাধ্যম যেমন- ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্মার্টফোন অথবা ট্যাব এ ব্যবহার করা যায়।

প্রতিটি মাধ্যমে ব্যবহার করার জন্য এর স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিমুক্ত সফটওয়্যার বা অ্যাপ WordPress.org এর ওয়েবসাইটে ও অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায়। এর মান সবসময়ই উন্নত হতে উন্নততর হচ্ছেই।

একটা ওয়েবসাইটকে যদি কোনো কম্পিউটারের সাথে তুলনা করা হয়, তবে ওয়ার্ডপ্রেস হলো উইন্ডোজের মতো অপারেটিং সিস্টেম। একবার ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল দিয়ে দিলেই ওয়েবসাইট রেডি।

কিন্তু কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমের সামান্য কিছু এ্যাপ্লিকেশন দিয়ে কি খায়েশ মেটানো সম্ভব?  অবশ্যই না! সেজন্য তো উপায় আছে। কম্পিউটারের জন্য তৈরী রয়েছে লাখ লাখ এ্যাপ্লিকেশন, যেগুলোর মাধ্যমে মনের মতো করে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায়।

ঠিক একইরকমভাবে ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট যুক্ত করা মাত্র ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেসের সামান্যকিছু ডিফল্ট সিস্টেম যুক্ত হয়। সেগুলো পছন্দ না হলে কম্পিউটারের এ্যাপ্লিকেশনের মতো ইন্সটল করে নেয়া যায় প্রয়োজনীয় কাজের বিভিন্ন প্লাগইন। বিভিন্ন ডিজাইনের জন্য যোগ করা যায় পছন্দসই থিম।

বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেসের নিজস্ব স্টোরে রয়েছে ৫ হাজারের বেশি থিম ও ৫০ হাজারের বেশি প্লাগইন।  এই সুবিধা শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেসেই পাওয়া যায়। প্লাগইন সুবিধাই ওয়ার্ডপ্রেসকে তুলে দিয়েছে অন্য যেকোনো প্লাটফর্ম হতে দূরতম উচ্চতায়।

আরও পড়ুন-

WordPress দিয়ে কি কি ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব?

কিছু বছর আগে পর্যন্ত ওয়ার্ডপ্রেস ছিল শুধুমাত্র একটি ব্লগ তৈরির মাধ্যম। মানুষ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতো একমাত্র ব্লগ তৈরির জন্য।  কিন্তু এখন, ওয়ার্ডপ্রেস নিজেকে সাঁজিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ও আকর্ষণীয় রূপে। যুক্ত করেছে প্লাগইন ও থিমের মতো অনন্য কিছু ফিচার এবং সেগুলোকে সমৃদ্ধ করে চলেছে নিয়মিতভাবে।

ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমানে শুধু ব্লগই নয়, যেকোনো প্রকার ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আদর্শ মাধ্যম। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে এখন ব্লগ থেকে শুরু করে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, পোর্টিফোলিও ওয়েবসাইট, ই-কমার্স ওয়েবসাইটসহ প্রায় সব ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা সম্ভব।

আপনি ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প সময় ব্যয় করে তৈরি করে ফেলতে পারেন-

  •     ব্লগ
  •     পোর্টিফোলিও
  •     প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক
  •     ব্যবসায়ীক
  •     ই-কমার্স
  •     ভিডিও
  •     স্ট্রিমিং
  •     ফোরাম
  •     সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
  •     অনলাইন স্টোর
  •     মেম্বারশিপ সাইট, ইত্যাদি।

WordPress (.Org) এবং WordPress (.Com) এর মধ্যে পার্থক্য কি?

প্রথমেই বলি, WordPress.Org এবং WordPress.Com একই প্লাটফর্ম নয়। আমরা এ পর্যন্ত যতটুকু আলোচনা করেছি, তার সবটাই ছিল WordPress.Org কে কেন্দ্র করে। ওয়ার্ডপ্রেস শব্দ দ্বারা WordPress.Org কেই বোঝানো হয়ে থাকে।

WordPress.Com হচ্ছে একটি ওয়েব হোস্টিং প্লাটফর্ম। তবে অন্যান্য ওয়েব হোস্টিং প্রতিষ্ঠানের মত এরা সব ধরণের অ্যাপ্লিকেশন তাদের সার্ভারে হোস্ট করার সুবিধা প্রদান করে না।

বরং WordPress.Com শুধুমাত্র WordPress CMS ব্যবহার করে ওয়েব হোস্টিং সুবিধা প্রদান করে থাকে। এবং, যে কোন ব্যক্তি পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে WordPress.Com এ একটি একাউন্ট করার পর তাদের ওয়েব হোস্টিং সুবিধা ব্যবহার করে নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন।

অন্যদিকে WordPress.Org  হলো একটি কমিউনিটি ড্রিভেন প্লাটফর্ম। অর্থাৎ অগণিত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস.অর্গ পরিচালিত হয়। এখানে WordPress CMS অ্যাপ্লিকেশন সম্পূর্ণ ফ্রি ডাউনলোড করার সুবিধা সহ ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু, যেমন- থিম, প্লাগইন, ব্যবহার বিধি, সাহায্য-সহযোগীতা পাওয়া যায়।

এই সবিধা সমূহ সম্পূর্ণ ফ্রি হলেও কোন ব্যবহারকারী এখানে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন না। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে অন্য কোন ওয়েব হোস্টিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হোস্টিং স্পেস ও ডোমেইন কিনে নিতে হয়। যার সামর্থ্য সবার থাকে না।

এজন্য ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস ব্যবহারকারীদের ওয়েব হোস্টিং সুবিধা প্রদান করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের প্রাথমিক (Basic) কিছু ফিচার সুবিধা যুক্ত করে WordPress.Com চালু করা হয়। যা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও শর্ত জুড়ে দিয়ে ব্যবহারকারীদের হোস্টিং ও ডোমেইন ছাড়াই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার সুযোগ করে দেয়।

WordPress.Com আপাতত দৃষ্টিতে বেশি লোভনীয় মনে হলেও এটা প্রচুর ঝামেলাবহুল। এখানে ওয়েবসাইট তৈরী করলে WordPress.Org এর উন্নত ফিচারগুলো (যেমন প্লাগইন, কাস্টম থিম) ব্যবহার করা যায় না। পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার আশাও ত্যাগ করতে হয়। WordPress.Com এর ফ্রি ভার্সনের মাধ্যমে কখনোই প্রফেশনাল লেভেলের ওয়েবসাইট তৈরী করা সম্ভব নয়।

অনেকেই নতুন অবস্থায় না বুঝে Wordpess.Com এবং WordPress.Org কে গুলিয়ে ফেলে। আমার দিকনির্দেশনা হলো, বড় কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরী করতে চাইলে WordPress.Org থেকে ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস (WordPress Content Management System) ব্যবহার করুন।

যদি হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার সামর্থ্য না থাকে, কিংবা ব্লগিং সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকে, তবে গুগল পরিচালিত ব্লগার ব্যবহার করুন। কিন্তু WordPress.Com এ ফ্রি ওয়েবসাইট? Never…

কেন আপনার ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা উচিৎ?

আগেই বলেছি, ইন্টারনেটের প্রায় ৪১% ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে। অন্য যেকোনো প্লাটফর্মের তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।

একদমই এটা ভাববেন না যে, অধিকাংশ মানুষ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করছে জন্যই আমি স্রোতের অনূকূলে গা ভাসিয়ে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে  বলছি। আপনার ওয়ার্ডপ্রেস  ব্যবহার করা উচিৎ, কারণ–

ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন অ্যাপ – ওয়ার্ডপ্রেস সম্পূর্ণ ফ্রি

ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনাকে ওয়েব হোস্টিং এবং ডোমেইন ছাড়া অন্য কোনো বাড়তি খরচ বহন করতে হবে না। আপনি চাইলে থিম ও প্লাগইন টাকা দিয়ে কিনে পেইড ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন কিংবা ফ্রিতে ফ্রি ভার্সনগুলো দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।

ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা বেশি সহজ

ইচ্ছে করলে এক লাইনের একটি কোড না লিখেও প্রোফেশনাল মানের ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। কারণ ওয়ার্ডপ্রেসে র‍য়েছে থিম ও প্লাগইন সিস্টেম। থিম নির্ধারণ করে দেয় আপনার ওয়েবসাইটটি দেখতে কেমন হবে এবং প্লাগইন ব্যবহার করা যায় ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি বা কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য।

সহজ মাইগ্রেশন সিস্টেম

অন্য প্লাটফর্ম হতে ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট মাইগ্রেট করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কোনো ঝামেলার সম্মুখীন না হয়েই ওয়েবসাইট মাইগ্রেট করা যায়।

সহজ Control Panel

ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করলে ওয়েবসাইট কন্ট্রোল করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। ডাশবোর্ডের মাধ্যমে পুরো ওয়েবসাইটের খবরাখবর রাখা যায়। মোবাইলের মাধ্যমে একটু সময়সাপেক্ষ হলেও পিসি ব্যবহার করলে খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেসের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ব্যাপক এসইও (Search Engine Optimization) সুবিধা

ওয়ার্ডপ্রেসের ওয়েবসাইটগুলোকে এ্যাডভান্স লেভেলের এসইও অপটিমাইজড হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এমনিতেই ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করা হয়েছে এসইও ফ্রেন্ডলী করে। এর পাশাপাশি আরও কিছু প্লাগইনস ব্যবহার করে খুব সহজেই হাই কোয়ালিটির এসইও অপটিমাইজড ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।

শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

কোনো প্লাটফর্মই ১০০% সিকিউর নয়। কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেসের মতো সিকিউরিটি অন্য কোনো প্লাটফর্মে পাওয়া কঠিন। নিয়মিত সিস্টেম আপডেট করায় ব্যবহারকারীর কোনো ভুল ছাড়াই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা সাইট হ্যাক করা দুষ্কর।

অসাধারণ সাপোর্ট এবং জানার প্রচুর সোর্স

ওয়ার্ডপ্রেসে কাজ করতে করতে কোনো জটিলতার সম্মুখীন হলে ভয়ের কিছু থাকে না। কারণ গুগলে সার্চ করলেই সমস্যার হাজার হাজার সমাধান চলে আসে। এমন অনেক ব্লগ আছে, যেগুলোর টপিক শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস এবং ওয়ার্ডপ্রেসের সমস্যার সমাধানকেন্দ্রিক। এসব ছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেসের নিজস্ব অফিশিয়াল সাপোর্ট তো থাকছেই।

তাই নিশ্চিন্ত ব্লগিং ক্যারিয়ার বা ওয়েবসাইট পেতে চাইলে আপনার জন্য এই ওয়ার্ডপ্রেসই সেরা প্লাটফর্ম।

ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখব এবং ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায়

ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমানে লক্ষ লক্ষ মানুষের শখ তো বটেই, আয়ের উৎস হয়ে দাড়িয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল ব্যবসা। এই ব্যবসায় ব্লগারদের পাশাপাশি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন ছোট বড় ওয়েব ডেভেলপার, থিম ডিজাইনার, ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টোমাইজারসহ আরো অনেকে….

অনলাইনে আয় করার সৃজনশীল জায়গাগুলোর মাঝে ওয়ার্ডপ্রেস সবচেয়ে বেশি নির্ভর‍যোগ্য স্থান। কারণ ওয়ার্ডপ্রেস কখনোই হুট করে হাড়িয়ে যাবে না। কোনো ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় এটি টিকে থাকবে যুগ যুগ।

সরাসরি ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আছে। যেমন-

ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে আয়

(ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার সেরা উপায়)

WordPress বা ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে; বিশেষ করে ব্লগ তৈরি করে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করা যায়। এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, মেম্বারশিপ বিক্রি ইত্যাদি তো আছেই।

ওয়ার্ডপ্রেস মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আয় (WordPress Migration)

অন্য প্লাটফর্ম থেকে কারো ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেসে ট্রান্সফার করে দিয়ে ভালো অংকের টাকা কামানো যায়। অনেকেই আছেন যারা ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে ভীষণভাবে অজ্ঞ। অজ্ঞতার জন্য ওয়েবসাইট নিজে নিজে ট্রান্সফার করার রিস্ক নিতে চান না।  তখন কড়া নাড়েন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের স্পেশালিস্টদের কাছে৷

সত্যি বলতে কি, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট মাইগ্রেশন করা খুবই সহজ। এ সম্পর্কে  সামান্য পড়াশোনা করলেই আপনি হয়তো হয়ে যাবেন ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট মাইগ্রেশন এক্সপার্ট ….🥴

ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট মাইগ্রেট করে আয় করার পদ্ধতির উপর অসাধারণ একটি আর্টিকেল পড়েছিলাম লার্নবিডিতে। আপনিও পড়তে পারেন: ওয়ার্ডপ্রেস মাইগ্রেশন করে ইনকাম করুন ২০০০৳ প্রতি ঘন্টায়!

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট মেইনটেন্সের মাধ্যমে  আয় (WordPress Maintenance)

অনেক ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী তাদের ওয়েবসাইটের পেছনে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ওয়েবসাইটের অত্যাবশকীয় কাজ যেমন আপডেট, ব্যাকআপ, নিরাপত্তা ইত্যাদি কাজের জন্য তারা লোক ভাড়া করেন। এসব সাধারণ কাজ করে দিয়ে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়।

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে ইনকাম

(ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার নির্ভরযোগ্য এবং ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন উপায়)

ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সেটায় ভিজিটর আনার জন্য সুষ্ঠভাবে এসইও (SEO) করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সবাই জানে। একটি ওয়েবসাইটকে সম্পূর্ণভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি (Search Engine Optimized) হিসেবে গড়ে তোলা খুব সহজ বিষয় নয়৷ এ কারণেই অনেক ওয়েবসাইটের এ্যাডমিন অন্যদের মাধ্যমে এসইও করিয়ে নেয়, বিনিময়ে অফার করে আকর্ষণীয় পরিমানের নগদ অর্থ।

থিম ও প্লাগইন ডেভেলপিং এর মাধ্যমে  ইনকাম

(ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার অন্যতম সেরা উপায় সমূহের একটি)

আগেই বলেছি, ওয়ার্ডপ্রেসে থিম এবং প্লাগইন সিস্টেম আছে। সকল থিম ও প্লাগইনের ফ্রি ভার্সনের পাশাপাশি আছে প্রিমিয়াম ভার্সন। ওয়েবসাইট ডেভেলপিং শিখে থিম বা প্লাগইন বানালে সেগুলো ভালো দামে বিক্রি করা যায়। ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য থিম ও প্লাগইন বানিয়ে হাজার হাজার ডেভেলপার মোটা অংকের অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে।

অনলাইনে ইনকাম করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শেখার উপায় (ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে শিখব)

ওয়ার্ডপ্রেস শেখার পরিকল্পনা করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি ওয়ার্ডপ্রেসের ঠিক কোন অংশে অবদান রাখতে চাইছেন।  আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং সেটা নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে চান, তবে তা শেখার জন্য ১০-১৫ দিনের বেশি প্রয়োজন হবে না। কেননা, ওয়ার্ডপ্রেস তৈরিই করা হয়েছে নতুনদের কথা মাথায় রেখে। সাধারণভাবে, গুগল বা ইউটিউবে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত ভিডিও পেয়ে যাবেন।

তবে আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের থিম ও প্লাগইন কাস্টমাইজেশন সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে সময় নষ্ট না করে এখনই সিএসএস এবং এইচটিএমএল শিখে ফেলুন। তারপর শিখুন পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট।

বাংলা ভাষায় এসব ওয়েব ডেভেলপিং ল্যাংগুয়েজ শেখার বহু ওয়েবসাইট রয়েছে। ইংরেজী সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে শেখার জায়গার পরিধি আরো বিস্তৃত  হয়ে যাবে।

এছাড়াও এসইও ও কনটেন্ট মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে আপনি করতে পারেন বিভিন্ন কোর্স। বর্তমানে বাংলা ভাষাতেই এসইও ও কনটেন্ট মার্কেটিং শেখার প্রচুর প্রিমিয়াম কোর্সের পাশাপাশি ফ্রি কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে।

তাহলে, সার-সংক্ষেপে-

WordPress কি এবং ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায় জানা প্রয়োজন কেন?

ওয়ার্ডপ্রেস এমন একটি প্লাটফর্ম,  যা সবার জন্য উন্মুক্ত। অন্যান্য প্লাটফর্মের তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেস সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে আয়ের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ। নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট  এবং প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেসের ভূমিকা তুলনাহীন।

আশা করি, WordPress বা ওয়ার্ডপ্রেস কি এবং ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বেসিক ধারণা দিতে পেরেছি। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় এবং ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন রাস্তা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে প্রচুর আলোচনা করব, উন্মোচন করব ওয়ার্ডপ্রেসের সব অলিগলি। আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

Featured Photo by Fikret tozak on Unsplash

Share this

Leave a Comment