ফ্রিল্যান্সিং কি: ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ২০২৪

ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের নাম। যার মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ে দক্ষ একজন ব্যক্তি হয়ে যেতে পারে নিজেই নিজের বস এবং অনলাইনে টাকা উপার্জন করতে পারে ঘরে বসেই। আজকের পূর্ণাঙ্গ ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন শিরোনামের এ লেখাতে ফ্রিল্যান্সিং কি, কিভাবে শিখবো এবং জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর প্রাথমিক বিষয়গুলো খুব ভালো ভাবে বুঝে ফেলবেন কিংবা হয়তো এটা পড়ার পর আপনার মনে অঙ্কিত ফ্রিল্যান্সিং শব্দটার দৃশ্যপটই পালটে যাবে।

সূচীপত্র


Table of Contents

ফ্রিল্যান্সিং কি (What is Freelancing)

ফ্রিল্যান্সিং শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো মুক্ত পেশা। অর্থাৎ মুক্তভাবে কাজ করে আয় করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়।

প্রকৃতপক্ষে, ফ্রিল্যান্সাররা গতবাঁধা নিয়মে সকাল সকাল অফিসে যেয়ে কোনো কোম্পানী কিংবা ব্যক্তির আওতায় চাকুরী করে অভ্যস্ত নন। তারা নিজের খেয়াল খুশি মতো ঘরে বসেই অফিস করেন এবং কাজের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারী সম্রাট।

ফ্রিল্যান্সার বা একজন মুক্ত পেশাজীবি মানুষ সাধারণত তার সামর্থ অনুযায়ী গ্রাহকের নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং কাজের শেষে পারিশ্রমিক নেওয়ার পর গ্রাহকের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না।

উইকিপিডিয়ার মতে, একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহমাফিক কাজ খুঁজে নেয় এবং মূলত কখনোই কোনো কাজের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় না।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি?

যে সকল ওয়েবসাইটগুলোতে ক্লায়েন্ট তার কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সার খোঁজেন এবং ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করে দেয়ার জন্য ক্লায়েন্ট খোঁজেন, সেই ওয়েবসাইটগুলোকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বলা হয়।

বলে রাখা ভালো, ফ্রিল্যান্সিং এর মার্কেটপ্লেস অত্যন্ত বিস্তৃত এবং ক্রমবর্ধমান। প্রতিনিয়তই মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের বৈচিত্র‍্য এবং চাহিদা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।

বর্তমান সময়ে দেশী বিদেশী অনেকগুলো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আপওয়ার্ক, ফাইভার এবং ফ্রিল্যান্সার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কেউ লোগো ডিজাইন করে, কেউ কনটেন্ট লেখে, কেউবা আবার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর মতো কাজের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ অনলাইনে করা সম্ভব, এমন সব ধরণের কাজই এখানে পাওয়া যায়। মূলত নিজ নিজ স্কিলকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের জন্য উপযুক্ত কাজ খুঁজে নেন।

এসব ওয়েবসাইটে ঘন্টা কিংবা পুরো কাজের বেসিসে পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রতিটি কাজের জন্য একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রাপ্ত পারিশ্রমিকের উপর এসব মার্কেটপ্লেস ভাগ বসায়। প্রতিটি কাজের পারিশ্রমিকের প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা মার্কেটপ্লেস কেটে নেয়।

ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি লাগে?

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অবশ্যই একটি ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রয়োজন হবে। তবে যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং এর বাজার বর্তমানে বেশ বিস্তৃত, তাই কিছু কাজ মোবাইল দিয়েও করা সম্ভব। যেমন, কনটেন্ট রাইটিং, স্ক্রিপ্ট রাইটিং ইত্যাদি।

এরপর প্রয়োজন হবে বিশেষ কিছু কাজের দক্ষতার। এসব দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই ক্লায়েন্টের কাজ করে দিতে হবে এবং অর্থ উপার্জন করা যাবে।

আপনার যদি বিশেষ কোনো কাজের দক্ষতা না থাকে, তবে দেরী না করে এক্ষুনি আগ্রহের জায়গা খুঁজে বের করুন। বর্তমান সময়ে ওয়েব ডেভালপিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো কাজগুলোর চাহিদা একদম তুঙ্গে। পাশাপাশি লোগো ডিজাইন এবং এসইও এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করব? (How to start Freelancing)

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য অন্তত একটি বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকতেই হবে। দক্ষতা অর্জনের পরই আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারবেন, নয়তো নয়।

যদি কোনো বিশেষ কাজে আপনার ভালো দক্ষতা থাকে, তবে নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর উপর ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।

১. নিশ বাছাই করা

আপনার দক্ষতা এবং আগ্রহের উপর নির্ভর করে প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে, কোন টপিক নিয়ে আপনি কাজ করতে চান।

নিশ বাছাই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রথম পদক্ষেপ। এটার উপরই নির্ভর করবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে আপনি ঠিক কতটা উন্নতি করতে পারবেন এবং আপনার যাত্রা কিরূপ হবে।

একেক নিশের কাজে একেক রকম ইনকাম হয়ে থাকে। তবে ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে, আপনাকে আগ্রহের দিকে তাকিয়েই নিশ বাছাই করতে হবে। এতে আপনি সহজে বিরক্ত হবেন না এবং দীর্ঘদিন কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।

২. একটি বাস্তবসম্মত টার্গেট সেট করুন

ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে, আপনাকে একটি বাস্তবসম্মত টার্গেট সেট করতে হবে। সঠিক টার্গেট নির্ধারণের জন্য নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন।

(i) আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা উপার্জন করতে চান?
(ii) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনি দৈনিক কত সময় দিতে পারবেন?
(iii) আপনি ফ্রিল্যান্সিংকে পার্ট টাইম জব হিসেবে নিচ্ছেন? নাকি ফুল টাইম?
(iv) আপনি যতটুকু সময় ফ্রিল্যান্সিং এর পেছনে ব্যয় করতে চাইছেন, ততটুকু সময়ে কি আদৌ আপনার চাহিদামতো টাকা আয় করা সম্ভব হবে? নাকি এটা আকাশকুসুম ভাবনা?
(v) যদি সম্ভব হয়ে থাকে, তবে কিভাবে এবং কেমন রেটের কতগুলো কাজ করলে এই পরিমাণ আপনি উপার্জন করতে পারবেন?

আপনার টার্গেট এবং এই সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা যদি খাতায় সুন্দর করে লিখে রাখতে পারেন, তবে ব্যাপারগুলো আপনার কাছে আরো স্পষ্ট থাকবে।

৩. ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম গুলোতে যুক্ত হবার উপায়

নিশ বাছাই এবং টার্গেট সেট করার পর আপনাকে কাজে নেমে পড়তে হবে। এজন্য ভালো ভালো কিছু ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম বা ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে মেম্বার হওয়া প্রয়োজন।

বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে মেম্বার হতে হলে কোনো প্রকার ফি চার্জ দিতে হয় না এবং নতুন অবস্থায় রেজিস্ট্রেশন চার্জ দিতে হয় – এমন প্লাটফর্মে প্রবেশ করাও বোকামী।

ফ্রিল্যান্সিং সাইটে রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার মূল কাজ হবে, নিজের প্রোফাইলটি যতটা পারা যায় সুন্দর করে প্রদর্শন করা, যেন ক্লায়েন্টের কাছে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রোফেশনাল লাগে।

রেজিস্ট্রেশন করার পর পরই কাজ পেতে শুরু করবেন, এমন আশাও মূলত দুরাশা। প্রথম দিকে কাজ পেতে অনেক বেশী বেগ পেতে হবে এবং ভাগ্যক্রমে কাজ পেয়ে গেলে ক্লায়েন্টকে সর্বোচ্চ মানের সার্ভিস দিতে হবে। এতে ক্লায়েন্ট অর্থের পাশাপাশি আপনাকে ভালো রেটিং দেবে, যা পরবর্তীতে আরো ক্লায়েন্ট পেতে সহায়তা করবে।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

উপরে উল্লেখিত অংশটুকু বোঝার পর নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে চাইছেন, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এবং ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়গুলো কি কি?

প্রকৃতপক্ষ ফ্রিল্যান্সিং নানা ভাবে শেখা যায়। ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, কোথা থেকে শিখব, কার কাছে শিখব এসব ব্যাপারে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে।

তার আগে, একটা কথা না বললেই নয়, ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষার উপর ভালো দখল তৈরি করতে হবে। এতে, ক্লায়েন্টের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় আপনি একটা ভালো ইম্প্রেশন তৈরী করতে পারবেন। তাই, প্রথমেই ইংরেজী কনভার্সেশনের উপর জোর দিন।

যদি ইংরেজী শেখার ব্যপারটা খুব বেশি জটিল মনে হয়, তবে অন্তত আপনার ফ্রিল্যান্সিং এর নির্দিষ্ট বিষয়টির বিভিন্ন শব্দের ইংরেজি মিনিং এবং সাধারণ আলাপচারিতার ইংরেজী অনুবাদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখুন।

এরপর নিম্নলিখিত উপায়গুলো ফলো করুন।

সরাসরি ফ্রিল্যান্সারদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখার পদ্ধতি – সঠিক ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পাবার একমাত্র উপায়

বাংলাদেশের নামকরা বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার তাদের নিজস্ব প্লাটফর্মে ফ্রিতে কিংবা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কোর্স বিক্রি করে আসছেন।

আপনি চাইলে তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোর্স করতে পারেন। তবে যেকোনো কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে অবশ্যই বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম থেকে ঐ কোর্স এবং কোর্সের ইন্সট্রাক্টর সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিতে হবে। কেননা, এই সেক্টরে চিটারের অভাব নেই।

এখানে বলে রাখা ভালো, কোর্স কেনার সময় কোনো থার্ড পার্টির কাছ থেকে কম মূল্যে না কিনে, সরাসরি কোর্সের মূল মালিক বা ইন্সট্রাক্টর ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকেই কিনবেন। এতে পরবর্তীতে আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের নানা আপডেট নিউজ জানতে পারবেন এবং দক্ষতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। কিন্তু থার্ড পার্টির কারো কাছ থেকে কোর্স কিনলে এই সুবিধাটা পাবেন না।

এছাড়াও আপনার যদি ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকে, তবে অনলাইনে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পেইড ফ্রীলান্সিং কোর্স করতে পারেন। এতে আন্তর্জাতিক মানের সেবাটা পাবেন। বড় বড় বিশ্বমানের ফ্রিল্যান্সাররা এসব কোর্স করেই মাসে লাখ টাকা কামাই করে নিচ্ছে।

এক্ষেত্রে, Udemy এর কোর্সগুলো বাছাই করতে পারেন। তারা বহুদিন যাবৎ কোর্সের সুবিধা দিয়ে আসছে। তাদের প্লাটফর্ম থেকে আপনি সামান্য মূল্যে (প্রায় ১০ থেকে ৩০ ডলারে) বিভিন্ন প্রিমিয়াম কোর্স পেয়ে যাবেন।

ইউটিউব থেকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায় – অনলাইনে বিস্তারিত ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ২০২৪ খুঁজে নিন

ইউটিউবে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন টপিক (বিশেষ করে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি) এর উপর বিস্তারিত বর্ণনা সমৃদ্ধ ভিডিও রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি কিংবা ইউটিউব মনিটাইজেশনের জন্য ইউটিউবে পার্ট বাই পার্ট করে ফ্রিল্যান্সিং এর ভিডিওগুলো প্রকাশ করে থাকে।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত ইউটিউবাররা সম্পুর্ন বাংলা ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন কোর্স ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছেন। তাদের মধ্যে N Shamim এবং Jubayer Academy বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বলে রাখা ভালো, N Shamim এর নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ফোরাম আছে এবং সে নিজের বানানো প্রিমিয়াম কোর্স অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার কোর্সের রিভিউও বেশ ভালো।

ফ্রিল্যান্সিং শেখার বই পড়ে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

(সব সময় হাতের কাছে রাখার মতো ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ২০২৪ নির্দেশিকা পাবেন একমাত্র ছাপা কাগজে মুদ্রিত বই সমূহে)

ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের বইপত্র পাওয়া যাচ্ছে। আপনি এসব বই পড়ে ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি টেকনিক খুব সহজেই শিখে ফেলতে পারবেন।

এসব বই কেনার জন্য সরাসরি আপনার এলাকার ভালো কোনো লাইব্রেরিতে চলে যান অথবা রকমারীতে বইয়ের অর্ডার দিন। বই কেনার আগে কোন বইটি ভালো হবে, সেই বিষয়ে একটু ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে নিতে পারেন।

রকমারীতে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা বই পেয়ে যাবেন। এই প্লাটফর্মের একটা বিশেষ সুবিধা হলো, প্রতিটি বইয়ের পেজে রিভিউ সেকশনে অন্যদের রিভিউ পড়া যায়।

টাকা কম থাকলে, যেসব বইয়ের রিভিউ পড়ে আপনার ভালো লাগবে, সেগুলোই শুধু কিনে পড়তে পারেন। আপনি যদি প্রোগ্রামার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে ঝংকার মাহবুবের লেখা হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং আপনার জন্য বেশ সহায়ক হবে।

পিডিএফ (PDF) বই পড়ে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

(অনলাইনে সহজেই পাওয়া যায় এমন কিছু ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন)

ফ্রিল্যান্সিং এর বইগুলো বাজারে কিংবা রকমারি.কম এ কিনতে গেলে দেখবেন, এ ধরণের বইয়ের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে। যদিও কথায় আছে, বই কিনে কেউ ফকির হয়না, তবুও অনেকেরই এতো দাম দিয়ে বই কিনতে ইচ্ছে করে না।

এক্ষেত্রে উপযুক্ত সামাধান নিয়ে এসেছে যেকোনো বইয়ের ফাঁস হওয়া অনলাইন সংস্করণ কিংবা পিডিএফ। আপনি গুগলে যেকোনো বইয়ের নাম লিখে শেষে “pdf Download” যুক্ত করে সার্চ মারলেই সেই বইটির পিডিএফ পেয়ে যাবেন। তারপর ডাউনলোড করে আরাম মতো পড়তে পারবেন।

তবে এক্ষেত্রে বলা বাহুল্য, সব বইয়ের অনলাইন সংস্করণ বা পিডিএফ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনার এলাকায় যদি কোনো পাবলিক লাইব্রেরী থাকে, তবে আপনি সোনায় সোহাগা। সেই লাইব্রেরীতে চলে যান এবং বইটি খোঁজা শুরু করুন।

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

(টাকা খরচ করে পাওয়া যায় এমন কিছু ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ২০২৪)

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণগুলো মূলত প্রচলিত ফ্রিল্যান্সিং কোর্স গুলোর তুলনায় একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এই ধরণের প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলোতে প্রতিটি বিষয় আপনাকে হাতে-কলমে শেখানো হবে। একদম কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জিত টাকা উত্তোলন করবেন এবং এসব বিষয়ের খুঁটিনাটি কলাকৌশলও হাতে কলমে শিখানো হবে।

অন্যদিকে, ফ্রিল্যান্সিং কোর্সগুলোতে হাতে-কলমে শেখানো হয় না। শুধুমাত্র ভিডিও এবং কুইজের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের একটি বিশেষ উদাহরণ হলো, বাংলাদেশ সরকারের একটি সচল প্রোগ্রাম লার্নিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, যার সংক্ষিপ্ত আকার এলইডিপি।

বাংলাদেশ সরকারের এই এলইডিপি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণটি সম্পূর্ণরূপে ফ্রি হলেও অন্যান্য বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণই আপনাকে মূল্যের বিনিময়ে  শিখতে হবে। এগুলোর অফলাইন এবং অনলাইন উভয় সংস্করণই থাকে।

বিভিন্ন ব্লগের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

বিভিন্ন অনলাইন ব্লগে ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন সেক্টর ও বিষয় নিয়ে নিয়মিত চর্চা করা হয়। সারা বিশ্বের মানুষ এসব ব্লগে ভিজিট করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট টপিকের আপডেট তথ্য জানতে পারে।

এ ধরণের চর্চা বাংলা ব্লগিং এও নতুন নয়। জাকির ডট মি এমনই একটি ব্লগ। এটি প্রোগ্রামার এবং ওয়েব ডিজাইনারদের জন্য বেশ গভীর একটি তথ্যভান্ডার এবং বলাবাহুল্য, সম্পূর্ণটাই বাংলা ভাষায় তৈরী। এরকম আরো বহু বিষয়ভিত্তিক ব্লগ রয়েছে বাংলাদেশে।

কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের তালিকা

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না নিয়ে কাজ শুরু করলে কখনোই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়। মনে রাখবেন, একেকটি মার্কেটপ্লেসের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তাই প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর নিয়ম কানুন ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে জেনে নিতে হবে।

এখানে জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই এই প্লাটফর্মগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সমৃদ্ধ আর্টিকেল আমরা প্রকাশ করবো।

সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস – আপওয়ার্ক (upwork.com)

বাংলাদেশের মানুষদের কাছে তুলনামূলক জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের নাম, আপওয়ার্ক।  এখানে ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন কাজ নিয়ে জব পোস্ট করে। কাজ করতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারদের সেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করতে হয়। ফ্রিল্যান্সারদের বিড দেখে ক্লায়েন্টরা তাদের কাজের জন্য উপযুক্ত একজনকে বাছাই করে।

এখানে ক্লায়েন্টরা দুইটি উপায়ে জব পোস্ট করতে পারে। একটি হলো ফিক্সড রেট, অন্যটি ঘন্টা ভিত্তিক রেট। আরও দুইটি প্লাটফর্ম ফ্রিল্যান্সার.কম এবং গুরু.কম হলো আপওয়ার্কের অনুরুপ মার্কেটপ্লেস।

আপওয়ার্কে দ্রুত সফল হওয়ার কিছু শর্টকাট টিপস:

  • আকর্ষণীয় উপায়ে প্রোফাইল সাজানো
  • দক্ষতা বিষয়ক বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা।
  • বিড করার জন্য কভার লেটার
  • ক্লায়েন্টকে ফিডব্যাক দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করা।

নতুনদের জন্য খুবই সহায়ক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস – ফাইভার (fiverr.com)

আপওয়ার্কে কাজের জন্য ক্লায়েন্টরা ফ্রিল্যান্সার চেয়ে জব পোস্টিং করলেও ফাইভারে বিপরীত ঘটনাটি ঘটে।

ফাইভারে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সার্ভিস অফার করে মার্কেটপ্লেসে পোস্ট করে এবং এই পোস্টগুলোকে বলা হয় একেকটি গিগ। এই গিগগুলো ৫ থেকে ২০০ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়।

অর্থাৎ, ফাইভারে বিডিং সিস্টেম নেই। ফাইভারে কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিজে থেকেই গিগ তৈরী করতে হবে এবং আগ্রহী ক্লায়েন্ট সেই গিগটি কিনে নেবেন।

ফাইভারে সাধারণত সব সেক্টরের কাজই পাওয়া যায়। আপনি যেকোনো প্রকার কাজ শিখেই ফাইভারে যুক্ত হতে পারেন। এজন্যই যারা ফ্রিল্যান্সিং এ একদম নতুন, ফাইভার তাদের প্রিয় প্লাটফর্মগুলোর তালিকার শীর্ষে থাকে।

ফাইভারে দ্রুত সফল হওয়ার কিছু টিপস বা শর্টকাট

  • গিগের দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ।
  • ভালো কিওয়ার্ড দিয়ে গিগ তৈরি করা।
  • গিগকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রমোট করা।

পিপল পার আওয়ার (peopleperhour.com)

পিপল পার আওয়ার হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এই প্লাটফর্মে ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ই নিজেদের চাহিদা এবং দক্ষতা লিখে জব পোস্ট করতে পারে।

অর্থাৎ একই প্লাটফর্মে ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – উভয় সাইটের বৈশিষ্ট্য পুরে দেয়া হয়েছে। এখানে ফিক্সড এবং ঘন্টা উভয় ভিত্তিতেই কাজ পাওয়া যায়।

এই মার্কেটপ্লেসে কাজের চাহিদা খুব বেশি। তাই নতুনদের কাছে এটা প্রিয় সাইটগুলোর একটি। এছাড়াও, এই মার্কেটপ্লেসের ফিচারগুলো খুবই সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি।

গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস – নাইনটিনাইন ডিজাইনস (99designs.com)

৯৯ ডিজাইনস মূলত তাদের জন্য, যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনে পারদর্শী। এই সাইটে শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইনের জব পোস্টিং হয়ে থাকে। এখানে বিজনেস কার্ড ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, বাটন ডিজাইন ইত্যাদি কাজ পাওয়া যায়।

এ প্লাটফর্মে কেউ জব পোস্ট করলে ক্লায়েন্টের চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ করতে পারবে এমন আত্মবিশ্বাসী ফ্রিল্যান্সাররা এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে।

নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত প্রতিযোগীতা চলে এবং প্রতিযোগিতা শেষে সকলের ডিজাইনের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট তার পছন্দ অনুযায়ী একটি ডিজাইন বেছে নেয় এবং সেই ডিজাইনটা যে করেছে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এই মার্কেটপ্লেসে বিড বা গিগ পোস্ট করার মতো কোনো ব্যাপার নেই। একেকটি কাজের জন্য নির্বাচিত বিজয়ীকে ৩০০ থেকে ১২০০ ডলার পর্যন্ত বখশিশ দেয়া হয়ে থাকে।

৯৯ ডিজাইনের প্রতিযোগিতার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো, প্রতিযোগীরা একটি প্রতিযোগিতায় যত ইচ্ছা ততটি ডিজাইন পোস্ট করতে পারে এবং প্রতিযোগিতাগুলোতে নতুন পুরাতন সব ইউজার অংশ নিতে পারে। তাই, ডিজাইনের ব্যাপারে দক্ষতা আছে এমন নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি একটি ভালো মার্কেটপ্লেস হতে পারে।

ইনভাটো (envato.com)

ইনভাটো প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে। একেকটি ওয়েবসাইট একেক সেক্টরের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। যেমন, গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য আছে গ্রাফিকরিভার এবং ওয়েবডিজাইনারদের জন্য রয়েছে থিমফরেস্ট।

গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা গ্রাফিকরিভারে তাদের সৃজনশীল ডিজাইন (উদাহরণস্বরুপ, লোগো, ভিজিটিং কার্ডসহ ইত্যাদী ধরনের ডিজাইন) বিক্রি করতে পারে।

অন্যদিকে, ওয়েব ডেভেলপার সেক্টরের ফ্রিল্যান্সাররা  HTML টেমপ্লেট, CSS এবং ওয়ার্ডপ্রেস ও ব্লগারের মতো প্লাটফর্মের জন্য বানানো থিম থিমফরেস্টে সেল করতে পারে।

নতুন ও ইউনিক কিছু করতে পারলে থিমফরেস্টে এবং গ্রাফিকরিভারে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রচুর টাকা ইনকাম করা সম্ভব। অপর দিকে, ডিজাইন নিম্নমানের হলে খিমফরেস্ট কর্তৃপক্ষ ডিজাইন সাইটে পোস্ট করার জন্য অ্যাপ্রুভই করেনা।

একটা ডিজাইন এই প্লাটফর্মে অ্যাপ্রুভ হলে সেটা পরবর্তীতে সারাজীবন যতবার বিক্রি হবে, ততবারই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকাম হবে। অর্থাৎ, ভালো একটি কাজের জন্য ইনকাম চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে।

ইনভাটোর মতো এই সাইটগুলো সৃজনশীল মানুষদের জন্য স্বর্গ। ভেবে দেখুন, সাধারণ ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মগুলোতে কাজ করলে আপনি একটি কাজ শেষ করার সাথে সাথেই একমেয়াদী অর্থ পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইনভাটোতে কাজ করলে একই কাজের মূল্য সারাজিবন বসে বসে পেতে পারেন!

মাইক্রোওয়ার্কার (www.microworkers.com)

মাইক্রোওয়ার্কারে তুলনামূলকভাবে ছোট ছোট কাজ পাওয়া যায়। যারা ফিল্যান্সিং এর দুনিয়ায় একদমই নতুন, তাদের জন্য এই মার্কেটপ্লেসে কাজ করা অনেক বেশি সহজ।

এই প্লাটফর্মটিতে মূলত ফোরাম পোস্টিং, সাইন আপ, টুইটার টুইট-রিটুইট, ফেসবুক লাইক, ক্লিক-সার্চ, ওয়েবসাইট বুকমার্ক, ইয়াহুতে প্রশ্নের উত্তর ইত্যাদী কাজগুলো পাওয়া যায়।

এখানে কোনো কাজের জন্য বিড করতে প্রয়োজন হয়না। প্রতিটি কাজ গুলো খুব ছোট এবং কম সময়ে শেষ করা যাবে এমন হয়। উপরে যতগুলো মার্কেটপ্লেসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মাঝে সবচেয়ে সহজ হলো এই মার্কেটপ্লেসের কাজগুলো।

মাইক্রোওয়ার্কারে দ্রুত সফল হওয়ার কিছু কার্যকরী ফর্মুলা

  • আপনি ঠিকঠাক মতো করতে পারবেন, শুধুমাত্র এরকম কাজগুলো করার জন্যই রিকোয়েস্ট করবেন। কেননা, কোনো কাজের জন্য রিকোয়েস্ট করার পর যদি সেটি সম্পূর্ণ করতে না পারেন, তবে ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।
  • সবসময়ই নির্ধারিত সময়ের ভেতর কাজ ডেলিভারি দিতে হবে।
  • কাজ শেষে ক্লায়েন্টের কাছে একটি ফিডব্যাকের জন্য অনুরোধ করুন।
  • যেকোনো কাজের বর্ণনা মন দিয়ে পড়ে তারপরই সেই কাজের জন্য রিকোয়েস্ট করবেন।

ফেসবুক

ফেসবুক মূলত এক ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে আপনি ইচ্ছে করলেই ফেসবুককে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স ভিত্তিক কাজ খুঁজে পাবার অন্যতম একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজেরাও তাদের প্লাটফর্মে এই সুবিধাটি যোগ করেছে।

আপনি যদি একজন সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে হয়ত খেয়াল করেছেন- ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজের জন্য লোক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।

এছাড়া, ফেসবুকের বাম দিকের মেনুবারে Jobs নামে একটি আইকনও দেখতে পাবেন যেখানে ক্লিক করলে facebook.com/jobs/ নামের পেজটি খুলবে। বলা বাহুল্য এই পাতাটি সাজানো হয়েছে আউটসোর্সারদের কাজের বিজ্ঞপ্তি দেয়া ও তাতে ফ্রিল্যান্সারদের জব এপ্লাই করে কাজ পাবার সুযোগ প্রদানের জন্য।

আপনিও ইচ্ছে করলে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপে একটু সচেতনভাবে ভালো-মন্দ যাচাই ও বাছাই করে বিভিন্ন নিয়োগকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ খুঁজে নিতে পারেন।

এছাড়া, ফেসবুক জবস থেকে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ খুঁজে নিয়ে তাতে এপ্লাই করে দেখতে পারেন। ফেসবুকে সাধারণত দেশীয় আউটসোর্সারদের কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে সরাসরি ব্যাংক ড্রাফট বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট ও রিসিভ করা যায়। তবে, এ পদ্ধতিটি ফেসবুক অনুমোদিত নয়।

অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রয়োজনও পড়ে না। কেননা আউটসোর্সার এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ই পারষ্পরিক যোগাযোগের কাজটি ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার না করেই ইমেইল, বিভিন্ন ইন্সট্যান্ট ম্যসেজিং অ্যাপ, প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে করে নিতে পারেন।

আপনি বাইরের আউটসোর্সারদের কাজ করার বিনিময়ে ফেসবুক পে অপশনটি ব্যবহার করে পেপাল অথবা ডেবিট / ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কি কি?

অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো এটি একটি মুক্ত পেশা। এখানে কোনো কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। নিজের ইচ্ছা এবং চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে কোনো লিমিট নেই। একজন ফ্রিল্যান্সার তার দক্ষতা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে আনলিমিটেড টাকা ইনকাম করতে পারে।

এছাড়াও, ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা তো থাকছেই! ট্রাফিক বা গ্রীষ্মের গরমে গা ভিজিয়ে অফিসে যাওয়ার কোনো প্যারা থাকে না।

ফ্রিল্যান্সিং এর আরো একটি বড় সুবিধা হলো, এই সেক্টরে কোনো ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন পড়ে না। কাজ শেখার সময় কিছু টাকা ঢালতে হয়, এটা ঠিক। কিন্তু বর্তমানে ফ্রিতেও বেশ ভালো ভালো কোর্স পাওয়া যায়। তাই ইনভেস্টমেন্ট ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।

ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধার বিষয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই আসবে অনিশ্চিয়তার কথা। ফ্রিল্যান্সারদের কাজের কোনো গ্যারান্টি থাকে না। মাঝে মাঝে এমনও হতে পারে, সারা মাসে একটিও কাজ পাচ্ছেন না!

বিশেষ করে নতুনদের বেলায় এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। নতুন অবস্থায় প্রোফাইল বেশ আনাড়ি হওয়ায় ক্লায়েন্টরা তেমন আগ্রহ দেখায়না বললেই চলে। এজন্য, অনেক ফ্রিল্যান্সার শুরুতেই হতাশ হয়ে এই সেক্টর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।

ফ্রিল্যান্সিং এর একটি বড় অসুবিধা হলো, এদেশের মানুষ এই পেশাকে সম্মানজনক ভাবে না। অনেকে এই শব্দটার সাথে একদমই অপরিচিত। তাই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা কামিয়ে ফেললেও আপনাকে নিজের নিন্দা এবং সরকারী কোনো কেরানীর প্রশংসা শুনতে হতে পারে।

এছাড়াও, আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রাপ্ত অর্থ হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তো আছেই!

ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং করে আনলিমিটেড টাকা আয় করা যায়। আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন, সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার দক্ষতার উপর। মূলত আপনার দক্ষতা যত বেশি হবে, আপনি তত বেশি কাজ পাবেন। আর যত বেশি কাজ পাবেন, তত বেশি ইনকাম করতে পারবেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারের ঘন্টায় এভারেজ ইনকাম ৯ ডলার এবং বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা সামগ্রিকভাবে এ পর্যন্ত মোট আয় করেছে প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের মতে, পুরো ইন্টার্নেটের ১৭% ফ্রিল্যান্সারই বাংলাদেশী এবং এদের একটি বড় অংশের মাসিক আয় অর্ধশত হাজার টাকার বেশি।

এইটুকু পড়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠার আগে শুনে নিন, এমন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়, যারা মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছে মাত্র একটা কাজের আশায়! এখন, আপনি যদি সচেতন না হয়ে কোনো প্রকার দক্ষতা অর্জন না করেই ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন, তবে আপনিও হয়তো তাদের দলেই শরীক হয়ে যাবেন। এজন্য কান খোলা রেখে শুনে নেওয়া প্রয়োজন, ফ্রিল্যান্সিং দক্ষদের জন্য এবং দক্ষতা অর্জন করে তারপরই মাঠে নামতে হবে।

— শেষ কথা —

আশংকাজনক হারে বেকারত্ব বৃদ্ধির এই দেশে আধুনিক প্রজন্মের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি আশার নাম। খুব শিঘ্রই এমন একটি সময় আসবে, যখন বাংলাদেশের কোনো যুবক আর বেকার থাকবে না। চাহিদা ও স্কিল অনুযায়ী প্রত্যেকেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কিছু না কিছু করে নিজের অন্তত হাত খরচটা জোগার করে নিতে পারবে।

ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বা ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায় এবং কিছু জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোর তথ্য সমৃদ্ধ এই পূর্ণাঙ্গ ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ২০২৪ আর্টিকেলে সম্যক ধারণা দেয়া হয়েছে। আশা করি, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আপনি আজ নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? দক্ষতা অর্জন করে শুরু করে দিন ফ্রিল্যান্সিং!

Featured Photo by Glenn Carstens-Peters on Unsplash

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-

অনলাইনে ইনকাম করার ২১টি নিশ্চিত উপায়

Share this

Leave a Comment